Thursday, March 3, 2016

হানাফী ও আহলে হাদীসদের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ নামাজের মাস’আলা ও তার প্রামাণিক পর্যালোচনা

হানাফী ও আহলে হাদীসদের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ নামাজের মাস’আলা ও তার প্রামাণিক পর্যালোচনা। 


সূচিপত্র
ক্রমিক
বিষয়
পৃষ্ঠা
ভুমিকা
আবু হানীফা রহ. এর পরিচয়
তাঁর মাযহাবের উৎপত্তি
আবু হানীফা রহ. ইলমী মাকাম
ফিকহে হানাফীর উৎস সাতটি
আবু হানীফা রহ. এর ফিকহ মজলিস
আহলে হাদীস ও লা মাযহাবীদের মাযহাব ও তার পরিচিতি
হানাফী ও আহলে হাদীসদের মধ্যে যে সকল নামাজের মাসআলা নিয়ে বিরোধ রয়েছে
তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত কতটুকু উঠাবে?
১০
ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরা
১১
নাভির নিচে হাত বাঁধা
১০
১২
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পায়ের গোড়ালী সমান করে দাঁড়ানো
১১
১৩
মুক্তাদীর জন্য কি ফাতেহা পড়া ওয়াজিব ?
১২
১৪
আস্তে আমীন বলবে
১২
১৫
রাফে ইয়াদাইন
১৩
১৬
সেজদায় যাওয়ার সময় আগে হাটু পরে হাত তারপর চেহারা মাটিতে রাখা সুন্নাত
১৪
১৭
প্রথম রাকাত শেষ করে না বসে সোজা উঠে দাঁড়ানো সুন্নাত
১৫
১৮
নামাযে প্রথম ও শেষ বৈঠকে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখা সুন্নাত
১৬
১৯
তাশাহহুদ বলার সময় আশহাদু আল্লা ইলাহা বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে ইল্লাল্লাহ বলার সময় তৎক্ষণাৎ নামিয়ে ফেলা
১৭
২০
দ্বিতীয় রাকাতের উদ্দেশ্যে উঠার জন্য দুই হাতের
উপর ভর না করা
১৭
২১
ইকামতের নিয়মাবলী
১৮
২২
ফজরের নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর ফজরের সুন্নাত আদায় করার সুযোগ রয়েছে
১৯

সূচিপত্র

ক্রমিক
বিষয়
পৃষ্ঠা
২৩
মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তি সময়ে দুই রাকাত নফল পড়া যাবে না
২০
২৪
সালাত আদায়ের পদ্ধতিতে পুরুষ ও মহিলার বিধান এক নয়
২১
২৫
মহিলাদের নামাযের কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হলো
২২
২৬
কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে উমরী কাযা
২৩
২৭
ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার প্রমাণ
২৪
২৮
বিতির নামাযের  যেই সকল মাসআলা  নিয়ে আহনাফ ও আহলে হাদীসদের মাঝে বিরোধ রয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো
২৬
২৯
বিতির ছুটে গেলে কাযা করতে হবে
২৬
৩০
বিতির সর্বনিম্ন তিন রাকাত
২৭
৩১
তৃতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুর পূর্বে দোয়ায়ে কুনূত  পাঠ করা
২৭
৩২
দোয়ায়ে কুনুতের আগে তাকবীর দিয়ে হাত উঠানো এবং পূনরায় হাত বাঁধা। এরপর কুনূত পাঠ করা
২৮
৩৩
বিতির নামাযে দুই রাকাত পড়ে প্রথম বৈঠক করা এবং এ বৈঠকে সালাম না ফেরানো
২৯
৩৪
তারাবীহ বিশ রাকাত পড়া সুন্নাত
৩০
৩৫
জানাযার নামায পড়ার পদ্ধতি
৩২
৩৬
ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর বলা সুন্নাত
৩৩
৩৭
জুমআর আগের ও পরের সুন্নাত
৩৪
৩৮
জুমআর খুতবা চলাকালে খুতবা শ্রবণ ব্যতীত নামায সহ যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা
৩৫
৩৯
মসজিদে সানী জামাত করা
৩৫
৪০
যে সকল মসজিদে একাধিক জামাত করা জায়েজ সেগুলো হলো
৩৬
৪১
যে সকল মসজিদে একাধিক জামাত করা মাকরূহ তা হলো
৩৬
৪২
একাধিক জামাতের ক্ষতিসমূহ
৩৭
৪৩
উপসংহার
৩৭

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله رب العالمين- والصلاة و السلام على سيد الأنبياء والمرسلين- أما بعد قال الله تعالى فى كلامه المجيد ( فاسألوا أهل الذكر إن كنتم لا تعلمون- سورة النحل٤٣) و فى آية آخر (يا أيها الذين آمنوا أطيعوا الله و أطيعوا الرسول وأولي الأمر منكم- سوؤة النساء - ٥٩)
وقال النبي صلى الله عليه و سلم عن حذيفة رضي الله عنه قال: كنا جلوسا عند النبي صلى الله عليه و سلم فقال: إني لا أدري ما بقائي فيكم فاقتدوا بالذين من بعدي وأشار إلى أبي بكر و عمر رضي الله عنهما (رواه الترمذي-٣٦٦٣)

ভুমিকা
রাসূল সা. বলেছেন, لا تجتمع أمتي علي الضلالة অর্থাৎ আমার উম্মত কোন গোমরাহীর ব্যাপারে একমত হবে না। সুতরাং একটি দল সদা কোরআন, সুন্নাহ ও হকের উপর অটল থাকবে। তাদের নিদর্শন হলো, তারা কোরআন, সুন্নাহ এবং দ্বীনের যাবতীয় বিষয়কে সাহাবায়ে কেরাম ও আকাবীর আসলাফের সহীহ ব্যাখ্যার আলোকে বুঝে থাকেন। এবং কোরআন, সুন্নাহ বুঝার ক্ষেত্রে স্বীয় যুক্তি ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেন না। এবং তাদের যুক্তি ও ব্যাখ্যা ইজমায়ে উম্মতের খেলাফ নয়। তাদেরই একজন হলেন, ইমাম আযম আবু হানীফা রহ.। যিনি কোরআন হাদীসকে সাহাবাদের আমল ও ব্যাখ্যার আলোকে বুঝেছেন। এবং উক্ত ব্যাখ্যার নীতিমালার আলোকে কোরআন ও হাদীস থেকে মাসআলা  উদ্ঘাটন করেছেন। আর উক্ত মাসআলা র সমন্বয়ে গঠিত মাযহাবকে হানাফী মাযহাব বলা হয়।
অপর শ্রেনি হলো স্বার্থান্নেষী ইংরেজ বেনিয়াদের হীন চক্রান্তের জাল স্বরূপ গঠিত ভ্রান্ত ফেরকা। তাদের অন্যতম হলো আহলে হাদীস ফেরকা। যারা কোরআন সুন্নাহকে সাহাবায়ে কেরাম ও আকাবীরদের সহীহ ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে নিজস্ব যুক্তির আলোকে বুঝে থাকেন। এবং এ ক্ষেত্রে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। আর এটাই হলো ভ্রান্তির প্রথম আলামত। প্রত্যেক ভ্রান্তির সূচনা جزئي বিষয় নিয়ে হলেও পরিশেষে তা মারাত্মক রূপ ধারণ করে।


মূল আলোচনার প্রারম্ভে উভয় শ্রেনির উৎপত্তি ও পরিচয় তুলে ধরা হলো
আবু হানীফা রহ. এর পরিচয়
নাম নোমান, কুনিয়ত আবু হানীফা, উপাধি ইমাম আযম। ৮০ হিজরীতে ইরাকে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫০ হিজরীতে খলীফা মানসুরের হাতে বিষ প্রয়োগে কারাবন্দী অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তিনি যখন বিষের ক্রিয়া অনুভব করলেন তখন তিনি সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। এবং সেজদারত অবস্থায় পরকালে গমন করলেন। তার জানাযায় প্রায় পাঁচ লক্ষ লোক হয়েছিলো। তাঁর অসিয়ত মোতাবেক খিজরানের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তাঁর মাযহাবের উৎপত্তি
ইমাম আবু হানীফা রহ. এর জন্মস্থান কূফা নগরীতে, যেখানে ১৫ শত সাহাবী আগমন করেছেন এবং ইলম বিতরণ করেছেন। ফলে কূফা নগরী ছিলো কোরআন, সুন্নাহের ইলমের একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র।
ইবনে সাদ রহ. طبقات গ্রন্থে কূফা অধিবাসী প্রসিদ্ধ সাহাবীগনের নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন,
*আলী ইবনে আবী তালিব * সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস
*সায়ীদ ইবনে যায়েদ *আবু কাতাদা
*আবু মূসা আশআরী *বারা ইবনে আযেব
*আম্মার ইবনে ইয়াসির *আবু মূসা আনসারী
*সালমান ফারসী *যায়েদ ইবনে আরকাম
*ওয়ায়েল ইবনে হুজর প্রমুখ সাহাবী
এই বিশিষ্ট সাহাবীগনের মাধ্যমে কূফা ও তাঁর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে কোরআন সুন্নাহর ইলম প্রচারিত হয়েছে। বিশেষতঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এর অবস্থান কূফা নগরীকে স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রদান করেছিলো। এই নগরীর বিশিষ্ট সাত ফকীহ তাঁরই শাগরেদ ছিলেন।
  • এর মধ্যে আলকামা রহ. এর অবস্থান ছিলো সর্বশীর্ষে।
  • ইবরাহীম নাখয়ী তার পরে এই অবস্থানে ছিলেন।
  • এরপর হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান
  • সর্বশেষে ইমাম আবু হানীফা রহ.
তিনি ১৫০ হিজরী সময়কাল পর্যন্ত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এর ইলম ও ফিকহের এই ধারাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেন। তৎকালীন ইসলামী বিশ্বে কোরআন সুন্নাহের ইলমের কেন্দ্ররূপে কূফা নগরীর অবস্থান ছিলো অন্যতম।


আবু হানীফা রহ. ইলমী মাকাম
এই জ্ঞান কেন্দ্রের অন্যতম প্রদীপ ইমাম আবু হানীফা রহ. এর সম্পর্কে ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে আদম রহ. বলেন, কূফা নগরীর ইলম ইমাম আবু হানীফা রহ. এর আত্মস্থ ছিলো। এবং তার বিশেষ মনোযোগ ঐ সকল হাদীসের দিকে ছিলো যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরবর্তী আমল সংরক্ষিত হয়েছে।
ইমাম আবু ইউসুফ রহ. বলেন, একদা আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হাদীস সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান আপনি কিভাবে অর্জন করেছেন? তিনি উত্তরে বলেন, কূফা নগরীর জ্ঞান ভাণ্ডার আমার কাছে রক্ষিত আছে। (মুহাম্মদ আওয়ামা প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৮৬,৮৮)
আবু হানীফা রহ. শুধু কূফা নগরীর জ্ঞানই আত্মস্থ করেছেন এমন নয়। বরং তিনি মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওরাহ এর আলিমদের নিকট থেকেও ইলম অর্জন করেছেন। উল্লেখ্য যে, তিনি জীবনে পঞ্চান্ন বার হজ্জ করেছেন। (মুহাম্মদ আওয়ামা প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৮৫,৮৯)
তার উস্তাদগনের সংখ্যাধিক্যের তাৎপর্য এখান থেকে বোঝা যায়। আল্লামা সালেহী রহ. উকূদুল জুমান কিতাবে এবং ইবনে হাজার হায়সামী রহ. আল খায়রাতুল হিসান কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আবু হানীফা রহ. এর উস্তাদের সংখ্যা ৪ হাজার। (মুহাম্মদ আওয়ামা, প্রাগুক্ত নতুন সংস্করণ, পৃষ্ঠা-১৭৬)
ইমাম আবু হানীফা রহ. যদি প্রত্যেক উস্তাদ থেকে একটি করেও হাদীস সংগ্রহ করে থাকেন তবুও চার হাজার হাদীস জানা থাকার কথা। তিনি যে একজন মুজতাহিদ ছিলেন এই বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর ইজমা রয়েছে। আর সতেরটি হাদীস জানা ব্যক্তিকে মুসলিম উম্মাহ একজন মুজতাহিদ হিসাবে স্বীকৃতি দিবে তা চিন্তা করাও বাতুলতা।   
ফিকহে হানাফীর উৎস সাতটি
  • কিতাবুল্লাহ
  • সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ সা.
  • আকওয়ালে সাহাবা
  • ইজমা
  • কিয়াস
  • ইস্তিহসান
  • রফ
আবু হানীফা রহ. এর ফিকহ মজলিস
জ্ঞান সমুদ্রে অবগাহনকারী ইমাম আবু হানীফা রহ. উক্ত সাত উৎস হতে গৃহীত মূলনীতির আলোকে মাসআলা উদ্ভাবন করে তার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি উচ্চাঙ্গের ফিকহ গবেষণা বোর্ডে পর্যালোচনার জন্য উত্থাপন করতেন। এ থেকে বুঝা যায় তিনি ফিকহ সংকলনে তার ব্যক্তিগত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করেন নি। বরং চল্লিশ জন শীর্ষ স্থানীয় ফকীহ ও মুহাদ্দিসের সমন্বয়ে একটি মজলিস গঠন করেছিলেন। যেখানে এক এক মাসআলার উপর দীর্ঘ আলোচনা ও পর্যালোচনা হতো।  সবশেষে যে সিদ্ধান্ত দলীলের আলোকে স্থির হতো তা লিপিবদ্ধ করা হতো। কখনো এক মাসআলাতে তিনদিন পর্যন্ত আলোচনা অব্যহত থাকতো। সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে এতটা সাবধানতা অবলম্বন করা হতো যে, মজলিসের একজন সদস্যও অনুপস্থিত থাকলে তার জন্য অপেক্ষা করা হতো। এবং তার মতামত উপস্থাপিত হওয়ার পর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হতো। সে সময়ের বড় বড় মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ফকীহ এই ফিকহ মজলিসের সদস্য ছিলেন। আর এই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পর্যালোচনার মাধ্যমে তাঁর জীবদ্দশায় ৮০,০০০ মাসআলা সংকলন করে যান। (আবু যাহরা আবু হানীফা দারুল ফিকহ, পৃষ্ঠা-২১৩)
আর উক্ত ফিকাহকেই ফিকহে হানাফী বলা হয়। এবং তিনিই সর্বপ্রথম ফিকহ সংকলনকারী। আর যারা তার সংকলিত ফিকহের অনুসরণ করেন তাদেরকে হানাফী বলা হয়।
তাই এই কথা দৃঢ়টার সাথেই বলা যায় যে, যে ফিকাহ পরিপূর্ণভাবে কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের উপর ভিত্তিশীল। এবং যা ইসলামের স্বর্ণযুগে যুগশ্রেষ্ঠ মনিষীদের তত্ত্বাবধানে সংকলিত হয়েছে। এরপর আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত যার ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা দান করেছেন। তার স্থায়িত্ব ও উপযোগীতা প্রশ্নাতীত এবং তা পরবর্তী যুগের লোকদের সমর্থনের মুখাপেক্ষী নয়। অতএব, কিছু মানুষের অস্বীকৃতি ও বিরোধীতা এর গ্রহনযোগ্যতাকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করতে পারবেনা।
আহলে হাদীস ও লা মাযহাবীদের মাযহাব ও তার পরিচিতি
পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত হক্ক ও বাতিলের সংগ্রাম চলছে এবং চলবে। ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে বাতিলের কোন আপোষ নেই। সুতরাং ইয়াহুদী এবং নাসারারা কখনো মুসলমানের বন্ধু হতে পারেনা।
হিজরী ১৩ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে ভারত উপমহাদেশে আগমন করেছিলো। কিন্তু তাওহীদী জনতা ঈমান ও দুর্বার আন্দোলনে টিকতে না পেরে লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলো। আর তাদের মূল দর্শন হলো মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো এবং তাদের মাঝে কর্তৃত্ব করা। তারা চলে গেছে ঠিক, কিন্তু তাদের দর্শন অনুযায়ী মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে বিচ্ছে সৃষ্টির জন্য তাদের বীজ হিসাবে অসংখ্য বাতিল ফিরকা প্রতিষ্ঠা করে যায়। তাদের অন্যতম হলো আহলে হাদীস ফিরকা। যারা নিজেদেরকে কখনো মোহাম্মদী কখনো আহলে হাদীস আবার কখনো সালাফী দাবী করে আসছে। আর মুসলিম উম্মাহ তাদেরকে গাইরে মুকাল্লিদ বা লা মাযহাবী হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে। তারা চার মাযহাবের কোন মাযহাবই মানে না। এবং কোন ইমামের তাকলীদ করেনা। বিধায় তাদেরকে গাইরে মুকাল্লিদ বলা হয়।
কিন্তু মূলত তারাও মুকাল্লিদ। কেননা ফিরকায়ে আহলে হাদীস তো একটা নির্দিষ্ট দল ও একটা মতাদর্শের নাম। সুতরাং যেই ব্যক্তি আহলে হাদীস হয় সে সকল বিষয়ে আহলে হাদীস আলেমেরই শরনাপন্ন হয়ে থাকে। যেমনিভাবে একজন হানাফী ব্যক্তি শরয়ী সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে হানাফী আলেমেরই শরনাপন্ন হয়ে থাকে। বরং তাদের তাকলীদ চার মাযহাবের অনুসারীদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কেননা চার মাযহাবের অনুসারীগন তো পরষ্পর সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। সকল মাযহাবের ইমামগনকেই মূল্যায়ন করেন ও দ্বীনের একনিষ্ঠ খাদেম মনে করেন। প্রত্যেকটি মাযহাবের ভিত্তি হক্কের উপর বলে জানেন এবং বিশেষ প্রয়োজনে এক মাযহাবের লোক অন্য মাযহাবের উপর আমলও করে থাকেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আহলে হাদীস ফিরকা নিজেদেরকে ব্যতীত সবাইকে পথভ্রষ্ট মনে করে। চার মাযহাবের ইমামদেরকে চারটি ভূত বলে আখ্যায়িত করে। তাকলীদ করাকে শিরকের অন্তর্ভুক্ত বলে। আর কেবল তাদেরই আনুগত্য ও তাদের দলের তাকলীদ করার প্রতি সবাইকে আহবান করে।
ভারতের হেসার জেলার প্রসিদ্ধ গাইরে মুকাল্লিদ আলিম মওলভী আব্দুশ শাকুর লিখেছেন, সত্য মাযহাব একমাত্র আহলে হাদীস। আর বাকী সব মাযহাব মিথ্যা ও জাহান্নামী। সুতরাং আহলে হাদীসদের জন্য আবশ্যক হলো ঐ সকল বাতিল ফিরকা (চার মাযহাব)থেকে বেঁচে থাকা (সিয়াহাতুল জানান, ৪)
তাদের অপর একজন আলিম নবাব সিদ্দীক হাসান খান লিখেছেন, আমাদের নিকট বিশ্লেষণধর্মী কথা হলো সারা পৃথিবীর মুসলমান দুই ভাগে বিভক্ত। এক. প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত যাদেরকে আহলে হাদীসও বলা হয়। আর দুই. হলো নির্দিষ্ট মাযহাবের মুকাল্লিদ। তারা মোট চারটি দলে বিভক্ত।
  • হানাফী
  • শাফেয়ী
  • মালেকী
  • হাম্বলী
তাই পৃথিবীর সকল আহলে হাদীস একই মতাদর্শ ও একই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। তাদের কাজ কথা ও আমলের কোন মতপার্থক্য নেই। এবং নামাজ, রোযা, হজ্জ,যাকাত সালাম, মুসাফা, তথা শরীয়তের সর্বক্ষেত্রে দুনিয়ার সব আহলে হাদীস একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। সুতরাং পাঠক মহলের বোঝা উচিত তারা কি গাইরে মুকাল্লিদ না চূড়ান্ত পর্যায়ের মুকাল্লিদ?
এ বিষয়টির উদাহরণ হলো যে, যে ফলের রস বেশী সে ফলের নাম আনারস, আর যে ফলের মাঝে দানা বেশী সে ফলের নাম বেদানা। আর যে দলে তাকলীদ বেশী সে দলের নাম গাইরে মুকাল্লিদ। তারা দাবী করে যে, তারা হলো আহলে হাদীস। অথচ তারাই সবচেয়ে বেশী হাদীস অস্বীকারকারী। এবং যাদের মধ্যে সালফে সালেহীনের অনুসরণ মোটেই নেই তাদের নাম সালাফী।
হানাফী ও আহলে হাদীসদের মধ্যে যে সকল নামাজের মাসআলা নিয়ে বিরোধ রয়েছে
  • ফরয  নামাজের ক্ষেত্রে
  • জুম্মার নামাজের ক্ষেত্রে
  • তারাবীহ নামাজের ক্ষেত্রে
  • বিতর নামাজের ক্ষেত্রে
  • জানাযার নামাজের ক্ষেত্রে
  • ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে
প্রথমে ফরয  নামাজের মধ্যে যে যে মাসআলায় হানাফী ও আহলে হাদীসদের মাঝে বিরোধ রয়েছে তার প্রামাণিক পর্যালোচনা তুলে ধরা হলো।
১- তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত কতটুকু উঠাবে?
আহলে হাদীসদের মতে তাকবীরে তাহরীমার সময় হস্তদ্বয় কাধ বরাবর উত্তোলন করা সুন্নাত। দলীল,
হযরত নাফে রাযি. থেকে বর্নিত যে, ইবনে ওমর রাযি. যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। (ইবনে মাজাহ, ৩৯১)
হানাফী মাযহাব মতে তাহরীমার সময় দুই হাত কান পর্যন্ত এভাবে উঠাতে হবে যে, হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী থাকে এবং বৃদ্ধা আঙ্গুল কানের লতি বরাবর থাকে। দলীল, হযরত বারা ইবনে আযেব রাযি. বলেন,
كان النبي صلي الله  عليه وسلم إذا كبر لافتتاح الصلاة رفع يديه حتى يكون إبهاماه قريبا من شحمتي أذنيه  
(তহাবী শরীফ-১/১৪৪, আবু দাউদ শরীফ-১/১০৫, তিরমিযী শরীফ-১/৩৩, মুসলিম শরীফ-১/১৬৮)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন কান পর্যন্ত এবং কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠাতেন, তেমনি কখনো কাঁধ পর্যন্তও উঠাতেন। কিন্তু হানাফী ফকীহগন যেহেতু এক হাদীসে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার স্থলে সকল হাদীস থেকে সার নির্যাস আহরণ করেন তাই তাদের বক্তব্য হলো তাহরীমার সময় এমন ভাবে হাত উঠাতে হবে যাতে হাতের আঙ্গুলগুলো কান বরাবর, বৃদ্ধা আঙ্গুল কানের লতি বরাবর এবং হাতের তালু কাঁধ বরাবর থাকে। তাহলে সকল হাদীসের উপর আমল হয়ে যাবে।
২-ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরা
আহলে হাদীসদের মতে ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরা সুন্নাত নয়, বরং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা সুন্নাত। দলীলঃ
قال سهل بن سعد رض كان الناس يئمرون ان يضع الرجل اليد اليمنى علي ذراعه اليسرى في الصلاة (رواه البخاري-١/١٠٥، الترمذي-١/٣٤)
হানাফী মাযহাব মতে তাহরীমার পর দুই হাত বাঁধা সুন্নাত। হাত বাঁধার নিয়ম হলো, ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠের উপর থাকবে। এবং কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা পেঁচিয়ে ধরবে। অন্য তিন আঙ্গুল বাম হাতের উপর বিছানো থাকবে। দলীল,
عن وائل بن حجر، قال: قلت: لأنظرن إلى صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف يصلي، قال: فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم فاستقبل القبلة فكبر فرفع يديه حتى حاذتا أذنيه، ثم أخذ شماله بيمينه (رواه أبو داود- ١/١٠٥، الترمذي-١/٣٤،سنن الدارمي، رقم الحديث-١٣٩٧)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
এক হাদীসে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার কারণে আহলে হাদীসরা অন্য হাদীসগুলো পরিত্যাগ করে বসেন। ফলে সেই জানা হাদীসটিরও সঠিক মর্ম অনুযায়ী তাদের আমল হলো কিনা তা সন্দেহযুক্ত থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে হানাফী ফকীহগন মনে করেন হাত বাঁধা বিষয়ক যে হাদীসগুলো রয়েছে তার সমন্বিত রূপই হলো সুন্নাত তরীকা। ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাযি. সুত্রে বর্ণিত হাদীস থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়। কেননা হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরতেন এবং তার ডান হাত থাকতো বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি, ও বাহুর উপর।
৩- নাভির নিচে হাত বাঁধা
আহলে হাদীসদের মতে নাভির নিচে হাত বাঁধা সুন্নাতের পরিপন্থী। বরং হাত বাঁধতে হবে সিনার উপর। এ ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সকলের একই বিধান। দলীল,
عن طاوس، قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع يده اليمنى على يده اليسرى ثم يشد بهما على صدره وهو في الصلاة (أبو داود، رقم الحديث-٧٥٩)
ইমাম আবু হানীফা রহ., সুফিয়ান সাওরী, ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, আবু ইসহাক মারওয়াযী প্রমুখ ইমামগন বলেন, নাভির নিচে হাত বাঁধা সুন্নাত। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর প্রসিদ্ধ মতও তাই। এবং ইমাম শাফেয়ী রহ. থেকেও অনুরূপ মত বর্নিত আছে। দলীল,
عن علقمة عن وائل بن حجر عن أبيه رض قال رأيت النبي صلي الله عليه و سلم وضع يمينه علي شماله في الصلاة تحت السرة (مصنف ابن أبي شيبة-١٢/٣٩٠ ، سنن أبي دلود- رقم الحديث-٧٥٦ ، مسند أحمد-١/١١٠ ، رد المحتار-١/٣٥١)

আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে তিনটি বর্ননা রয়েছে। তবে সবগুলোতে কালাম ও আপত্তি রয়েছে। তাছাড়া علي صدره  কথাটুকু মুআম্মাল ইবনে ইসমাঈল নামী জনৈক রাবীর নিজস্ব বৃদ্ধি, যাকে ইমাম বুখারী রহ. মুনকারুল হাদীস সাব্যস্ত করেছেন। তাছাড়া সুফিয়ান সাওরী রহ. এর অন্যান্য শাগরেদ তাদের বর্ণিত এই হাদীসে উক্ত অংশটুকু উল্লেখ করেননি। শুধু মুআম্মাল ইবনে ইসমাঈলই উক্ত অংশটুকু বৃদ্ধি করেছেন।
দ্বিতীয়ত উক্ত হাদীসটিতে মহিলাদের হাত বাঁধার হুকুম বলা হয়েছে, পুরুষের নয়। এই থেকে সুস্পষ্ট হলো পুরুষ ও নারীর বিধান এক নয়।  
৪-কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পায়ের গোড়ালী সমান করে দাঁড়ানো
আহলে হাদীসদের মতে নামাজে একে অপরের কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে এবং একজনের পা অপরজনের পায়ের সাথে মিলিয়ে দাঁড়ানো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যদি কেউ এরূপ না করে তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না। দলীল,
عن أنس بن مالك، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أقيموا صفوفكم، فإني أراكم من وراء ظهري، وكان أحدنا يلزق منكبه بمنكب صاحبه، وقدمه بقدمه (رواه البخاري-١/١٠٠)
আহনাফের মতে নামাজের মধ্যে পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলের পায়ের গোড়ালী একই বরাবর করে দাঁড়াতে হবে। দলীল,  
عن أنس بن مالك، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أقيموا صفوفكم، فإني أراكم من وراء ظهري، وكان أحدنا يلزق منكبه بمنكب صاحبه، وقدمه بقدمه (رواه البخاري-١/١٠٠، أبو داود-١/٩٧)

আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
আহলে হাদীসরাও তাদের দাবীর স্বপক্ষে এই হাদীসটি উল্লেখ করে থাকেন। বস্তুত এই হাদীসের মধ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এবং সকলে পায়ের গোড়ালী এক সমান করে কাতার সোজা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হানাফীরা কাতার সোজা করার জন্য উক্ত পদ্ধতির উপর আমল করেন। এবং কাতার সোজা করার পর নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সকলের পায়ের গোড়ালী এক বরাবর রাখতে বলেন। প্রকৃত পক্ষে হাদীসের মর্মও এটাই। হাদীসের অর্থ এই নয় যে, একজন নিজের পা পার্শ্ববর্তী ভাইয়ের পায়ের উপর উঠিয়ে দেবে বা একদম মিলিয়ে রাখবে। অনুরূপভাবে কাঁধে কাঁধ মিলানোর অর্থ এই নয় যে, একজনের কাঁধ অপরজনের কাঁধে মিলিয়ে সংকীর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করে অন্য ভাইয়ের খুশু-খুযু ও একাগ্রতা নষ্ট করবে।

৫-মুক্তাদীর জন্য কি ফাতেহা পড়া ওয়াজিব ?
আহলে হাদীসদের মতে মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতেহা পড়া ফরয । কেউ না পড়লে তার নামজই হবে না। চাই নামাজের কেরাত জেহরী হোক বা সিররী হোক। দলীল,
عن عبادة بن الصامت، قال: صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم الصبح، فثقلت عليه القراءة، فلما انصرف قال: إني أراكم تقرءون وراء إمامكم، قال: قلنا: يا رسول الله، إي والله، قال: لا تفعلوا إلا بأم القرآن، فإنه لا صلاة لمن لم يقرأ بها (رواه الترمذي- ١/٤١)
ইমাম আবু হানীফা রহ., ইমাম আবু ইউসুফ রহ., ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর নিকট সর্বাবস্থায় (নামাজ সিররী হোক বা জেহরী মুক্তাদী ইমামের কেরাত শুনতে পাক বা না পাক) মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতেহা পড়া নাজায়েজ। বরং মাকরুহে তাহরীমী। দলীল,
قوله تعالي:  وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ (سورة الأعراف- ٢٠٤)

قوله عليه السلام: من صلي ركعة لم يقرأ فيها بأم القرآن فلم يصل إلا أن يكون وراء الإمام (رواه الترمذي- ١/٤٢)
قوله عليه السلام: عن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من كان له إمام، فقراءة الإمام له قراءة (سنن إبن ماجة، رقم الحديث- ٨٥٠، الترمذي- ١/٤٢، نصب الراية- ٢/١٢، تفسير إبن كثير- ٢/٢٨٠، مسلم- ١/١٧٤، نسائي- ١/١٤٦، أبو داود- ١/١٤٠، مسند أحمد- ٤/٤١٠)

আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
১- কোরআনের উক্ত আয়াত হলো নাসেখ আর সূরা ফাতেহা পড়ার হাদীস মানসূখ।
২- উক্ত হাদীসে একাকী নামাজ আদায়কারীর হুকুম বলা হয়েছে। মুক্তাদীর জন্য নয়।

৬- আস্তে আমীন বলবে
আহলে হাদীসদের মতে উচ্চ আওয়াজে আমীন বলা সুন্নাত। দলীল,
قال رسول الله صلي الله عليه و سلم: إذا قال الإمام ولا الضالين فقولوا آمين فإنه من وافق قوله قول الملائكة غفر له (رواه البخاري- ١/٧٨٢)
আহনাফের মতে আমীন আস্তে বলা সুন্নাত। দলীল,
عن علقمة بن وائل عن ابيه أن النبي صلي الله عليه وسلم قرأ غير المغضوب عليهم ولا الضالين فقال آمين وخفض بها صوته (رواه الترمذي- ١/٥٩، مسند أحمد- ٤/٣١٦، إعلاء السنن- ٢/٢١١، نصب الراية- ١/٣٦٩، البخاري- ١/٧٨٢، بيهقي- ٢/٥٧، سنن الدار قطني- ١/٣٣٤، الجوهر النقير- ٢/٥٨ )
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
কোরআন হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমীন আস্তে বলা সুন্নাত। কিন্তু লা মাযহাবীরা বলে থাকে আমীন জোরে বলা সুন্নাতে মোআক্কাদা। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোরআনে কোন দলীল নেই। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্বাওলী কোন হাদীস নেই। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, তোমরা ১৯ রাকাত ফরয  নামাজের মধ্যে মাত্র ৮ রাকাতে জোরে আমীন বলবে।
আর যে সমস্ত ফেলী হাদীস তারা পেশ করেন তার অধিকাংশ সহীহ, কিন্তু সুস্পষ্ট নয়। আর যেগুলো সুস্পষ্ট সেগুলো আবার সহীহ নয়।
তারা তাদের মজবুত দলীল হিসাবে ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাযি. এর হাদীসটি উল্লেখ করে থাকেন। যাতে রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উচ্চস্বরে আমীন বলেছেন। এই হাদীসের জবাব হলো স্বয়ং হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাযি. বলেছেন, আমাদের শিখানোর জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোরে আমীন বলেছেন। (আসারুস সুনান ১/৯২)
৭- রাফে ইয়াদাইন
আহলে হাদীসদের মতে নামাজের শুরুতে এবং প্রতি রাকাতে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রাফে ইয়াদাইন করা সুন্নাতে মোআক্কাদা। দলীল,
عن سالم بن عبد الله، أن ابن عمر، قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا قام للصلاة رفع يديه حتى تكونا حذو منكبيه، ثم كبر، فإذا أراد أن يركع فعل مثل ذلك، وإذا رفع من الركوع فعل مثل ذلك، ولا يفعله حين يرفع رأسه من السجود (رواه مسلم، رقم الحديث-٣٩٠)
আহনাফের মতে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত রুকুতে যাওয়া ও রুকু থেকে উঠার সময় রাফে ইয়াদাইন মাকরুহ অর্থাৎ অনুত্তম। দলীল,
عن جابر بن سمرة، قال: خرج علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: ما لي أراكم رافعي أيديكم كأنها أذناب خيل شمس؟ اسكنوا في الصلاة (رواه مسلم- ١/١٨١)
عن علقمة، قال: قال عبد الله بن مسعود: ألا أصلي بكم صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فصلى، فلم يرفع يديه إلا في أول مرة (الترمذي- ١/٣٥) ----------- (أبو داود- ١/١٥٠، نسائي- قرم الحديث- ١٧٦، طحاوي- ١/١٥٨، مسند أحمد- ٥-٩٣، الجوهر النقير- ١\١٣٨)

আহলে হাদীসদের জবাব
রাফে ইয়াদাইন সম্পর্কে কোন ক্বাওলী হাদীস নেই যার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাফে ইয়াদাইন করতে বলেছেন। এমনকি এর ফযিলত সম্পর্কেও কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কতক সাহাবায়ে কেরাম এটা করতে দেখেছেন। অথচ এটা সর্বসম্মত উসূল যে, ক্বাওলী আর ফেলী হাদীসের মধ্যে ক্বাওলী হাদীস বেশী শক্তিশালী। আর ক্বাওলী হাদীস দ্বারা কোন একটা জিনিস সর্বদা পড়ার কথা প্রমাণ করা যায়। কিন্তু ফেলী হাদীস এর ব্যতিক্রম।
তাছাড়া তাদের উত্থাপনকৃত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. এর হাদীসের জবাব হলো, এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম যুগের আমল ছিলো। পরবর্তীতে এটা রহিত হয়ে গেছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাযি. একদিন মসজিদে হারামে দেখলেন যে, এক ব্যক্তিকে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রাফে ইয়াদাইন করছে। তিনি তাকে বললেন, তুমি এরকম করোনা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা শুরু যামানায় করলেও পরে তা তরক করেছেন।
দ্বিতীয় প্রমাণ হলো, এই হাদীসের বর্ননাকারী স্বয়ং ইবনে ওমর রাযি. রাফে ইয়াদাইন করতেন না। এর দ্বারা বুঝে আসে যে, তার নিকটও আলোচ্য হাদীসটি মানসুখ (রহিত) বলে বিবেচিত ছিলো।

৮- সেজদায় যাওয়ার সময় আগে হাটু পরে হাত তারপর চেহারা মাটিতে রাখা সুন্নাত
আহলে হাদীসদের মতে সেজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাত তারপর হাটু মাটিতে রাখা সুন্নাত। দলীল,
عن نافع، عن ابن عمر، رفعه قال: إن اليدين تسجدان كما يسجد الوجه، فإذا وضع أحدكم وجهه فليضع يديه، وإذا رفعه فليرفعهما (رواه أبو داود، رقم الحديث- ٩٢٨٩٢)
রাসূল সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সেজদা করে তখন সে যেন উটের মতো না বসে। বরং সে যেন, স্বীয় হস্তদ্বয় হাটুদ্বয়ের আগে রাখে। (আবু দাউদ, ১/৪৫৫)  
আহনাফের মতে সেজদায় যাওয়ার সময় আগে হাটু পরে হাত তারপর চেহারা মাটিতে রাখা সুন্নাত। দলীল,
عن وائل بن حجر، قال: رأيت النبي صلى الله عليه وسلم إذا سجد وضع ركبتيه قبل يديه، وإذا نهض رفع يديه قبل ركبتيه (رواه أبو داود، ١/١٢٢، الترمذي-١/٦١، إبن ماجة، رقم الحديث-٨٨٢، الدارمي-١/٣٠٣، النسائي، رقم الحديث- ١٠٨٩، إبن خزيمة، رقم الحديث- ٦٢٦، صحيح إبن حبان، رقم الحديث-١٩٠٩)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
ইবনে খুযাইমা রহ. হাটু আগে রাখার হাদীসকে রহিতকারী আর আগে হাত রাখার হাদীসকে রহিত বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তাদের উত্থাপনকৃত হযরত ইবনে ওমরের হাদীসটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, সঠিক কথা হলো, এটি হযরত ইবনে ওমরের নিজস্ব আমল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়ত কোন ওযরের কারণে আগে হাত রেখেছেন। আর এটা রাসূলের সাময়িক আমল। আর হাটু আগে রাখার আমলটি ছিলো রাসূলের দায়েমী আমল।
আর হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাযি. এর হাদীসটি সুপ্রমানিত।  
৯- প্রথম রাকাত শেষ করে না বসে সোজা উঠে দাঁড়ানো সুন্নাত
আহলে হাদীসদের মতে প্রথম রাকাত শেষ করে সোজা হয়ে বসে তারপর দাঁড়ানো সুন্নাত। দলীল,
عن أبي قلابة، قال: أخبرنا مالك بن الحويرث الليثي، أنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم يصلي، فإذا كان في وتر من صلاته لم ينهض حتى يستوي قاعدا (رواه البخاري، ١/١٢٣)
আহনাফের মতে প্রথম রাকাত শেষ করে বসার পরিবর্তে সোজা উঠে দাঁড়ানো সুন্নাত। দলীল,
عن أبي هريرة: أن رجلا دخل المسجد فصلى، ورسول الله صلى الله عليه وسلم في ناحية المسجد، فجاء فسلم عليه، فقال له: ارجع فصل فإنك لم تصل فرجع فصلى ثم سلم، فقال: وعليك، ارجع فصل فإنك لم تصل قال في الثالثة: فأعلمني، قال: إذا قمت إلى الصلاة، فأسبغ الوضوء، ثم استقبل القبلة، فكبر واقرأ بما تيسر معك من القرآن، ثم اركع حتى تطمئن راكعا، ثم ارفع رأسك حتى تعتدل قائما، ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا، ثم ارفع حتى تستوي وتطمئن جالسا، ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا، ثم ارفع حتى تستوي قائما، ثم افعل ذلك في صلاتك كلها (رواه البخاري، رقم الحديث- ٦٦٦٧، الترمذي، رقم الحديث- ٢٨٨، أبو داود، رقم الحديث-٩٦٦، مسند أحمد- ٥/٣٤٣، مصنف عبد الرزاق، رقم الحديث- ٢٩٦٦/٢٩٦٧، إبن أبي شيبة، رقم البحديث- ٣٣٩٩)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
আহলে হাদীসগন দলীল হিসাবে মালিক ইবনে হুয়াইরিস রাযি. এর যে হাদীসটি উল্লেখ করে থাকেন তাতে রাসূল সা. এর বসার আমলটি কোন ওযরের কারণে হয়ে থাকবে। এটা নামাযের সুন্নাত হিসাবে করা হয় নি। এই বৈঠক যদি ওযর ছাড়া হতো তাহলে এতে বিশেষ কোন যিকিরের বিধান অবশ্যই রাখা হতো। (তাহাবী, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৭৬) তাছাড়া এটা যদি রাসূল সা. এর নিয়মিত আমল হতো তাহলে নামাযের বিবরণ দানকারী সকল সাহাবী তা উল্লেখ করতেন।
১০- নামাযে প্রথম ও শেষ বৈঠকে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখা সুন্নাত
আহলে হাদীসদের মতে তাশাহহুদ পড়ার সময় উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসা সুন্নাত। দলীল,
فقال أبو حميد الساعدي: أنا كنت أحفظكم لصلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم……………فإذا جلس في الركعة الآخرة، قدم رجله اليسرى، ونصب الأخرى، وقعد على مقعدته( شرح السنة للبغوي، رثم الحديث-٥٥٧)
আহনাফ এবং অধিকাংশ আলিমের মতে যেমন সুফিয়ান সাওরী, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক প্রমুখ উলামাদের মতে নামাযে প্রথম ও শেষ বৈঠকে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখা সুন্নাত। দলীল,
عن عائشة، قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم ……………وكان يقول في كل ركعتين التحية، وكان يفرش رجله اليسرى وينصب رجله اليمنى (رواه مسلم-١/١٩٤، مصنف إبن أبي شيبة، رقم الحديث-٢٩٤٣، الترمذي، رقم الحديث-٢٩٢، البخاري، رقم الحديث- ٨٢٧، النسائي، رقم الحديث- ١١٥٧،١١٥٨)

আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
তাদের উত্থাপিত আবু হুমায়দ রাযি. এর হাদীসটিতে যে পদ্ধতিতে বসার কথা বলা হয়েছে সেটা ওযরের কারণে ছিলো। স্বাভাবিক অবস্থায় উভয় বৈঠকে একই ভাবে বসতেন। অধিকন্তু এরা নিজেদেরকে সালাফী বলে পরিচয় দেয়। অথচ তারা পুর্বসূরীদের অধিকাংশের আমল ছেড়ে দিয়েছে। শুধু ছেড়ে দিয়েছে তাই নয়, বরং সেটিকে সুন্নাতের পরিপন্থী আখ্যা দিচ্ছে। তাদের অবস্থা দেখলে মনে সুফিয়ান সাওরী ও ইবনুল মোবারক রহ. প্রমুখ হাদীসের সাগর মহাসাগররা বেঁচে থাকলে তাদেরকেও এরা সুন্নাত শিখিয়ে দিতো।
১১-তাশাহহুদ বলার সময় আশহাদু আল্লা ইলাহা বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে ইল্লাল্লাহ বলার সময় তৎক্ষণাৎ নামিয়ে ফেলা
আহলে হাদীসগন বলেন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে নামিয়ে ফেলবে না। বরং শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতে থাকবে। দলীল,
عن علي بن عبد الرحمن المعاوي، قال: رآني عبد الله بن عمر، وأنا أعبث بالحصى في الصلاة، فلما انصرف نهاني، وقال: اصنع كما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصنع، فقلت: وكيف كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصنع؟ قال: كان إذا جلس في الصلاة وضع كفه اليمنى على فخذه اليمنى، وقبض أصابعه كلها، وأشار بأصبعه التي تلي الإبهام، ووضع كفه اليسرى على فخذه اليسرى  (أبو داود- ١/١٤٢)
আহনাফের মতে আশহাদু আল্লা ইলাহা বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে শুধু ইশারার কথা হাদীসে উল্লেখ আছে। দলীল,
عن عبد الله بن الزبير، أنه ذكر، أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يشير بأصبعه إذا دعا، ولا يحركها  (أبو داود- ١/١٤٢، النسائي- ١/١٣٠)
তাদের দলীলের জবাব
তাদের হাদীসটি আমাদের হাদীসের মুখালিফ নয়। কারণ উভয় হাদীসেই ইশারা করার কথা বলা হয়েছে। আর ইশারার কথা আমরাও স্বীকার করি। ইশারার পদ্ধতি হলো আশহাদু আল্লা ইলাহা বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে। ইল্লাল্লাহ বলার সময় নামিয়ে ফেলবে। লা মাযহাবী ভাইয়েরা হাদীসের সঠিক মর্ম বুঝতে ভুল করেছেন। কারণ ইশারার অর্থ এই নয় যে, আঙ্গুল সর্বদা নাড়াতে থাকবে। কারণ এটা হাদীসের খেলাফ। কেননা হাদীসে সর্বদা আঙ্গুল নাড়ানোর কথা বলা হয় নি।
১২- দ্বিতীয় রাকাতের উদ্দেশ্যে উঠার জন্য দুই হাতের
উপর ভর না করা
আহলে হাদীসদের মতে দ্বিতীয় রাকাতে উঠার সময় মাটিতে ভর করে উঠা সুন্নাত। দলীল,
وإذا رفع رأسه عن السجدة الثانية جلس واعتمد على الأرض، ثم قام (رواه البخاري- ١/١١٤)
আহনাফের মতে দ্বিতীয় রাকাতে উঠার সময় মাটিতে ভর করে উঠা মাকরুহ। দলীল,
وقال ابن عبد الملك، نهى أن يعتمد الرجل على يديه إذا نهض في الصلاة  (أخرجه أبو داود- ١/١٤٢)
نهى أن يعتمد الرجل على يده في الصلاة "، وقال ابن رافع: " نهى أن يصلي الرجل وهو معتمد على يده "، وقال ابن عبد الملك: " نهى أن يعتمد الرجل على يديه إذا نهض في الصلاة (السنن الكبري للبيهقي، رقم الحديث- ٢٨٠٨، شرح السنة للبغوي، رقم الحديث- ٦٧١)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
রাসূল সা. হয়ত কোন ওযরের কারণে হাতের উপর ভর করে উঠেছেন। আর এটা রাসূল সা. এর সব সময়ের আমল ছিলো না। বরং রাসূল সা. এর সব সময়ের আমল হচ্ছে হাতের উপর ভর না করে উঠা।  সুতরাং ওযরের কারণে সাময়িক আমল দায়েমী আমলের দলীল হতে পারে না।  
১৩-ইকামতের নিয়মাবলী
আহলে হাদীসদের মতে আযানের বাক্যগুলো দু-দু বার করে আর ইকামতের বাক্যগুলো বেজোড় করে তথা একবার করে বলতে হবে। দলীল,
عن أبي قلابة، عن أنس قال: إن رسول الله صلى الله عليه وسلم أمر بلالا أن يشفع الأذان، وأن يوتر الإقامة (أخرجه البخاري- ١/٨٥)
আহনাফের মতে আযানের মতো ইকামতের শব্দগুলিও দুবার করে বলতে হবে। দলীল,
عن عبد الرحمن بن أبي ليلى، قال: كان عبد الله بن زيد الأنصاري، مؤذن النبي صلى الله عليه وسلم يشفع الأذان والإقامة (مصنف إبن أبي شيبة، رقم الحديث-٢١٣٩)
عن أبي محذورة، أن النبي صلى الله عليه وسلم علمه الأذان تسع عشرة كلمة، والإقامة سبع عشرة كلمة،قال أبو عيسى: هذا حديث حسن صحيح (أخرجه الترمذي، رقم الحديث-١٩٢، مصنف إبن أبي شيبة، رقم الحديث-٢١٥١، الدارمي، رقم الحديث-١١٩٦،١٩٩٧، النسائي، رقم الحديث- ٦٣٠)

আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
ইকামত একবার বলার আদেশ সম্বলিত বিলাল রাযি. এর হাদীসটি আবু মাহযূরা রাযি. এর উক্ত হাদীসের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে। কারণ, বিলাল রাযি. এর হাদীসটি হলো পূর্বের আর আবু মাহযূরা রাযি. এর হাদীসটি হলো পরের। তাই আবু মাহযূরা রাযি. এর হাদীসটি হলো রহিতকারী। আর এটা মক্কা বিজয়ের পরের ঘটনা। এমনকি স্বয়ং আল্লামা শাওকানী রহ. যিনি নিজেও লা মাযহাবী ছিলেন। তিনি এ বিষয়টি অর্থাৎ আবু মাহযূরা রাযি. এর হাদীসটি বিলাল রাযি. এর হাদীসকে রহিতকারী বলে স্বীকার করেছেন।
১৪- ফজরের নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর ফজরের সুন্নাত আদায় করার সুযোগ রয়েছে
আহলে হাদীসদের মতে ফজর বা অন্য যেকোন ফরয নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সুন্নাত না পড়েই জামাতে শরীক হতে হবে। দলীল,
عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أقيمت الصلاة، فلا صلاة إلا المكتوبة (رواه أبو داود- ١/١٨٠)
হানাফী মাযহাব মতেও জামাত শুরু হওয়ার পর কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে তাকে সুন্নাত পড়া ব্যতিরেকে জামাতে শরীক হতে হবে। তবে ফজরের সুন্নাত এর থেকে ব্যতিক্রম। অর্থাৎ ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও তার যদি এই এক্বীন হয় যে, সে সুন্নাত পড়ে জামাতে শরীক হতে পারবে তাহলে তার জন্য মসজিদের বারান্দায় বা জামাতের কাতার থেকে দূরে অন্য কোন স্থানে সুন্নাত আদায় করার অনুমতি রয়েছে। তার কারণ হলো, অন্যান্য উন্নাতের চেয়ে ফজরের সুন্নাতের গুরুত্ব বহুগুন বেশি। বরং এই দুই রাকাত এমন সুন্নাত যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী। সুতরাং এই দুই রাকাত পড়তে হবে। এবং জামাতেও শামিল হতে হবে। এর পদ্ধতি হলো দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রথমে সুন্নাত পড়বে এরপর জামাতে শামিল হবে। আর তাশাহহুদ না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সুন্নাত পড়া ব্যতিরেকে জামাতে শামিল হয়ে যাবে। দলীল,
عن عبد الله بن أبي موسى قال: جاءنا ابن مسعود والإمام يصلي الفجر، فصلى ركعتين إلى سارية، ولم يكن صلى ركعتي الفجر (مصنف عبد الرزاق-٢/٤٤٤)

قال: حدثنا مالك بن مغول، قال: سمعت نافعا، يقول: أيقظت ابن عمر رضي الله عنهما لصلاة الفجر , وقد أقيمت الصلاة , فقام فصلى الركعتين (شرح معاني الآثار،رقم الحديث- ٢٢٠٣)
عن أبي عثمان الأنصاري، قال: جاء عبد الله بن عباس والإمام في صلاة الغداة , ولم يكن صلى الركعتين فصلى عبد الله بن عباس رضي الله عنهما الركعتين خلف الإمام , ثم دخل معهم وقد روي عن ابن عمر مثل ذلك (شرح معاني الآثار،رقم الحديث- ٢٢٠١)
----------------(إعلاء السنن-٧/٩٨، الفتاوي الهندية-١/١٧٩، أبو داود- ١/١٨٠، الفتاوي الشامي- ٢/٥١٠،٥١٢، فتح القدير- ١/٤٩٢، البحر الرائق- ٢/١٢٩)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
ফজরের সুন্নাত হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত নয়। কেননা রাসূল সা. ফজরের সুন্নাতের ব্যাপারে কঠোর তাগিদ দিয়েছেন যে, হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, দুশমনের ঘোড়া যদি তোমাদেরকে ধাওয়া করে তথাপিও ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত তোমরা ছেড়ে দিও না। (আবু দাউদ-১/৪৮৭) এই কারণে সাহাবাগন ফজরের ইকামতের পরে প্রথমে সুন্নাত পড়ে তারপর জামাতে শরীক হতেন।
তাদের অপর একটি হাদীস যে, ইবনে আব্বাসকে ফজরের জামাত দাঁড়ানোর পর সুন্নাত পড়তে দেখে রাসূল সা. ধমক দিয়েছেন। (ফাতহুল বারী- ২/১২৬) এই হাদীসের জবাব হলো, ইবনে আব্বাস রাযি. কাতারের মধ্যে দাঁড়িয়ে সুন্নাত পড়ছিলেন। এই কারণে রাসূল সা. তাকে ধমক দিয়েছেন। জামাতে দাঁড়ানোর পর সুন্নাত পড়ার কারণে নয়।
১৫- মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তি সময়ে দুই রাকাত নফল পড়া যাবে না
আহলে হাদীসদের মতে মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তি সময়ে দুই রাকাত নফল পড়া মুস্তাহাব। দলীল,
عن عبد الله بن مغفل، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: بين كل أذانين صلاة لمن شاء (رواه الترمذي، رقم الحديث-١٨٥)
আহনাফের মতে মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝে দুই রাকাত নফল পড়া যাবে না। কারণ রাসূল সা., খুলাফায়ে রাশেদীন এবং আকাবীরে সাহাবাগনের মধ্য হতে কেউ কখনো মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নফল পড়েন নি। এই নফল যদি মুস্তাহাব হতো তাহলে স্বয়ং রাসূল সা. ও খুলাফায়ে রাশেদীনগন অবশ্যই পড়তেন। তাই মাগরিবের আগে দুই রাকাত নফল পড়া যাবে না। দলীল,
عن عبد الله بن بريدة، عن أبيه، رضي الله عنه، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: بين أذانين صلاة إلا المغرب (مسند البزار، رقم الحديث- ٤٤٢٢)
عن جابر رض قال سألنا نساء رسول الله صلي الله عليه وسلم هل رأيتن رسول الله صلي الله عليه وسلم يصلي الركعتين قبل المغرب؟ فقلن لا غير أن أم سلمة قالت صلهما عندي مرة فسألته ما هذه الصلاة؟ فقال النبي صلي الله عليه وسلم نسيت الركعتين قبل العصر فصليتهما الآن (إعلاء السنن- ١/٧٠،٧١)
حدثنا حماد بن أبي سليمان أنه سأل إبراهيم النخعي عن الصلاة قبل المغرب قال فنهاه عنها وقال إن رسول الله صلي الله عليه وسلم وأبا بكر وعمر لم يكونوا يصلونها رواه محمد في كتاب الآثار (إعلاء السنن-٢،٧٢)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
১) তাদের উত্থাপিত হাদীসটি মুজমাল। এর তাফসীর হলো অপর হাদীস। তা হলোبين أذانين صلاة إلا المغرب। সুতরাং মাগরিব ব্যতীত অন্য নামাযে আযান ও ইকামতের মাঝে দুই রাকাত নফল পড়া যাবে।
২) অথবা উক্ত হাদীসকে যদি আম ধরা হয় তাহলেও মাগরিব নামায উক্ত হাদীসের হুকুম থেকে ইস্তিসনা ধরা হবে। কারণ মাগরিব তাড়াতাড়ি করার ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্নিত হয়েছে। যেমন এই উম্মত কখনো কল্যান থেকে খালি হবে না যতদিন তারা মাগরিব নামাযকে তাড়াতাড়ি আদায় করবে।
৩) তাছাড়া রাসূল সা., খুলাফায়ে রাশেদীনগনের কেউ তা করেন নি। তাই শুধু কতক সাহাবী পালন করার দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হতে পারে না। বরং জায়েজ বা ইবাহাত হতে পারে।
১৬- সালাত আদায়ের পদ্ধতিতে পুরুষ ও মহিলার বিধান এক নয়
আহলে হাদীসগন বলেন, সালাত আদায়ের পদ্ধতিতে পুরুষ ও মহিলার বিধান সমান। দলীল,
عن أبي سليمان مالك بن الحويرث، قال: أتينا النبي صلى الله عليه وسلم، ونحن شببة متقاربون، فأقمنا عنده عشرين ليلة، فظن أنا اشتقنا أهلنا، وسألنا عمن تركنا في أهلنا، فأخبرناه، وكان رفيقا رحيما، فقال: ارجعوا إلى أهليكم، فعلموهم ومروهم، وصلوا كما رأيتموني أصلي (رواه البخاري- ١/٢٢٦)
وقال النخعي تفعل المرأة في الصلاة كما يفعل الرجل (مصنف إبن أبي شيبة)
عن مكحول وكانت أم الدرداء تجلس في صلاتها جلسة الرجل (البخاري- ١/٢٨٤)
তারা বলে পুরুষ ও মহিলা সকলেই এই হাদীসের হুকুমের আওতাভূক্ত। এখানে নারী পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য করা হয় নি। তাই নামাযের  বিধানের ক্ষেত্রে সকলেই সমান।  
আহনাফের মতে সালাতের পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে মহিলাদের আমল পুরুষের আমলের অনুরূপ নয়। তা সরাসরি রাসূল সা. এর হাদীস থেকেই প্রমাণিত যে, দুজন মহিলা সালাত আদায় করছিলেন তাদের সেজদা করার পদ্ধতি দেখে রাসূল সা. তাদেরকে সংশোধন করে বললেন, নিশ্চয় নামাযের বিধানের ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষের মতো নয়। দলীল,
عن يزيد بن أبي حبيب، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على امرأتين تصليان فقال: إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل (رواه أبو داود في مراسيله- ٨، رواه البيهقي في سننه -٢/٢٢٣)
عن أبي هريرة رضي الله عنه، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: التسبيح للرجال، والتصفيق للنساء (رواه البخاري- ١/٤٠٣، إبن ماجة، رقم الحديث-١٠٣٤، أبو داود، رقم الحديث- ٩٣٩، سنن النسائي، رقم الحديث-١٢٠٧، صحيح إبن خزيمة، رقم الحديث-٨٩٤)

মহিলাদের নামাযের কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হলো
১- মহিলারা আযান দিতে পারে না। যদি দেয় তাহলে পুরুষের মাধ্যমে দোহরাতে হবে। (ইলাউস সুনান ২/১২৪, বাইহাক্বী ১/৭৯)
২- মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতে শরীক হওয়া নিষেধ। (ফাতহুল বারী ২/২৯০)
৩- শুধু মহিলাদের জামাত করা মাকরুহে তাহরীমী। (ইলাউস সুনান ৪/২২১)
৪- কোন পুরুষের জন্য মহিলা ইমামের ইক্তেদা করা জায়েজ নয়। এবং মহিলার জন্যও কোন পুরুষের ইমাম হওয়া জায়েজ নয়।
৫- মহিলা তাহরীমা বাঁধার সময় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং চাদরের ভেতর থেকে হাত বের করবে না।
৬- মহিলারা সীনার উপর হাত বাঁধবে।
৭-মহিলারা রুকুতে পুরুষের তুলনায় কম ঝুকবে।
৮- মহিলারা রুকুতে উভয় বাহু পাঁজরের সঙ্গে পরিপুর্ণভাবে মিলিয়ে রাখবে।
৯- মহিলারা রুকুতে হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে।
১০- মহিলারা সংকুচিত হয়ে সেজদা করবে এবং কনুইদ্বয় পুরুষের মতো খোলা ও ছড়িয়ে রাখবে না।
১১- মহিলারা সেজদায় উভয় উরুকে পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে।
১২- বৈঠকের সময় উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপর বসবে।
এসব বিষয়গুলো হাদীস দ্বারা অকাট্টভাবে প্রমাণিত।
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
১) صلوا كما رأيتموني أصلي বস্তুত এই হাদীসটিতে একটি মূলনীতি প্রদান করা হয়েছে। আর তা হলো রাসূল সা. যেভাবে সালাত আদায় করেছেন সেভাবে সালাত আদায় করতে হবে। উক্ত মূলনীতি পুরুষ নারী সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। তবে তা নামাযের পদ্ধতিগত বিষয়ে নয়। বরং নামাযের হুকুম-আহকাম ও রোকন সমূহের ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমান। সুতরাং উক্ত হাদীস দলীল হিসাবে উল্লেখ করা বুদ্ধিমানের পরিচায়ক নয়।
২) মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাতে ইবরাহিম নাখয়ী থেকে এই ধরনের কোন বর্ননা উল্লেখ নেই। বরং জনাব নাসীরুদ্দীন আলবানী তার নামে চালিয়ে দিয়েছেন। অথচ ইবরাহিম নাখয়ী থেকে একাধিক সনদে এর ব্যতিক্রম মত বর্নিত হয়েছে।
৩) ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, মাকহুলের রিওয়ায়েতে বর্নিত উম্মে দারদা ছিলেন একজন তাবেয়ী। যিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। (ফাতহুল বারী ২/৩০৬)
শায়খ যাকারিয়া রহ. বলেন, একজন তাবেয়ীর আমল দলীল হিসাবে গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। (লামেউদ দারারী আলা জামিউল বুখারী ১/৩৩১)
  • অন্য সকল তাবেয়ীগনের আমল পুরুষের মতো ছিলো না। উম্মে দারদা ব্যতীত। সুতরাং সামগ্রিক আমলের বিপক্ষে একজনের আমল গ্রহনযোগ্য হবে না।
১৭- কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে উমরী কাযা
আহলে হাদীসদের মতে কেউ যদি সময়মত নামায আদায় করতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে তা কাযা করার প্রয়োজন নেই। আর পরবর্তীতে কাযা করাটা একটি অনর্থক কাজ। বরং শুধু তাওবা করলেই যথেষ্ট হয়ে যাবে। দলীল,
قوله تعالي: إن الصلاة كانت علي المؤمنين كتابا موقوتا (سورة النساء-١٠٣)
আহনাফের মতে পবিত্র কোরআনে নামাযের সময়সীমা নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি যেমন উল্লেখিত হয়েছে তেমনি নির্ধারিত সময়ে তা আদায় না করে থাকলে পরবর্তী সময়ে তা কাযা করার বিষয়টিও পরোক্ষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। সহীহ হাদীস ও আছারে সাহাবার মধ্যে বিষয়টির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বিদ্যমান রয়েছে। দলীল,
عن أنس بن مالك، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا رقد أحدكم عن الصلاة، أو غفل عنها، فليصلها إذا ذكرها،
(رواه مسلم، رقم الحديث-٦٨٤، ٣١٦) فإن الله يقول: {أقم الصلاة لذكري} [ طه: ١٤]
عن أنس قال: سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الرجل يرقد عن الصلاة أو يغفل عنها قال: كفارتها أن يصليها إذا ذكرها (رواه النسائي، رقم الحديث-٦١٤)---------------  مسلم ، رقم الحديث- ٦٨٤، إبن ماجة، رقم الحديث- ٣٠١، الموطأ لمالك، ص٣، البخاري-٢/٢، مسند أحمد-٤/١٨١)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
তাদের উত্থাপিত আয়াতে নামাযের সময় নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি যেমন উল্লেখ হয়েছে তেমনি পরোক্ষভাবে কাযা করার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। সহীহ হাদীস ও আছারে সাহাবা তে বিষয়টির ব্যাখ্যা বিদ্যমান।
শুধু তাওবা ই যথেষ্ট এই কথাটি ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, তাওবা দ্বারা এমন তাওবা উদ্দেশ্য যার মধ্যে কাযা হয়ে যাওয়া নামায সমূহ আদায় করা অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং শুধু তাওবার মাধ্যমেই কাযা নামায মাফ হয়ে যাবে এই কথাটি ঠিক নয়। কারণ রাসূল সা. স্বয়ং খন্দকের যুদ্ধে কাযা হয়ে যাওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করেছেন। এবং হাদীসে কাযা নামায আদায় করার নির্দেশ এসেছে।  
১৮- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার প্রমাণ
আহলে হাদীসদের মতে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদআত। এটি আল্লামা ইবনে তাইমিয়া এবং আল্লামা হাফেজ ইবনুল কায়্যিম এরও মত। তাদের দলীল,
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. যখন ফরয  নামাযের  সালাম ফিরাতেন তখন এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়তেন যে, মনে হতো তিনি উত্তপ্ত পাথরের উপর উপবিষ্ট আছেন। (উমদাতুল ক্বারী- ৬/১৩৯)
আহনাফের মতে ফরয  নামাযের পর মুনাজাত করা একটি মুস্তাহাব আমল, বিদআত নয়। কারণ বিদআত বলা হয় ঐ আমলকে শরীয়তে যার কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ উক্ত মুনাজাত বহু নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা সুপ্রমানিত। তাই
  • যারা মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করে তারাও ভুলের মধ্যে রয়েছেন।
  • আর যারা ইমাম মুক্তাদীর সম্মিলিত মুনাজাতকে সর্বাবস্থায় বিদআত বলেন তাদের দাবীও ভিত্তিহীন।
  • আর যারা মুনাজাতকে জরুরী মনে করেন এবং এই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন এবং কেউ না করলে তাকে কটাক্ষ করেন তারাও ভুলের মধ্যে আছেন।
আহনাফের দলীল
  • হযরত আবু উমারা রাযি. হতে বর্নিত আছে যে, রাসুল সা. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন সময় দোয়া কবুল হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে? রাসূল সা. উত্তরে বললেন, শেষ রাতে এবং ফরয নামাযের পর। (তিরমিযী ৩/১৬৭ )
  • হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, যখন তুমি ফরয  নামায হতে ফারেগ হও তখন দোয়ায় মশগুল হয়ে যাবে। (তাফসীরে ইবনে আব্বাস পৃষ্ঠা-৫১৪)
  • হযরত কাতাদা, যাহহাক ও কালবী রহ. হতে বর্নিত আছে যে, তারা বলেন, ফরয  নামায সম্পাদন করার পর দোয়ায় লিপ্ত হবে। (তাফসীরে মাযহারী ১০/২৯)
  • ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ. বলেন, যে সকল ফরয  নামাযের পর সুন্নাত নেই সে সকল নামাযের  পর ইমাম ও মুক্তাদীগন আল্লাহর যিকিরে মশগুল হবেন। অতঃপর ইমাম কাতারের ডান দিকে মুখ করে দুআ করবেন। তবে সংক্ষিপ্তভাবে মুনাজাত করতে চাইলে কিবলার দিকে মুখ করেও করতে পারেন। (ফাতহুল বারী ২/৩৩৫)
  • আল্লামা নববী রহ. বলেন, সকল ফরয  নামাযের পরে ইমাম, মুক্তাদী, ও মুনফারিদের জন্য দোয়া করা মুস্তাহাব। এই ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। (শরহে মুসলিম লিন নববী)
  • আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলেন, নামাযের পরে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা বিদআত নয়। কারণ এই ব্যাপারে প্রচুর ক্বাওলী রিওয়ায়েত বিদ্যমান। ফেলী রিওয়ায়েতের মধ্যে রাসূল সা. মাঝে মধ্যে এ মুনাজাত করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এটাই সকল মুস্তাহাবের নিয়ম। (ফায়জুল বারী ২/১৬৭-৪৩১-৪/৪১৭)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. এর উল্লেখিত আমলের এই অর্থ নয় যে, তিনি সালাম ফিরানোর পর মাসনুন দোয়া, যিকির না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন। কেননা তিনি রাসূল সা. এর বিরুদ্ধাচরন কখনোই করতে পারেন না। কারণ রাসূল সা. হতে সালাম ফিরানোর পর বিভিন্ন দোয়া যিকির হাদীসে বর্নিত আছে। এবং তিনি ফরয ও সুন্নাতের মাঝখানে কিছু সময় ব্যবধান করার যে হুকুম হাদীস শরীফে পাওয়া যায় তার খেলাফ করতে পারেন না। উক্ত রিওয়ায়েতের মর্ম হলো, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. সালাম ফিরানোর পর দোয়া যিকির পাঠের জন্য অধিক সময় বসে থাকতেন না।

১৯- বিতির নামাযের  যেই সকল মাসআলা  নিয়ে আহনাফ ও আহলে হাদীসদের মাঝে বিরোধ রয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো
প্রথমে শিরোনাম আকারে তা উল্লেখ করা হলো
  1. সময় মতো বিতির পড়া না হলে পরে আদায় করা।
  2. বিতিরের রাকাত সংখ্যা তিন।
  3. তৃতীয় রাকাতে রুকুর আগে দোয়ায়ে কুনূত  পড়া।
  4. দোয়ায়ে কুনুতের আগে তাকবীর দিয়ে হাত উঠানো এবং পূনরায় হাত বাঁধা।
  5. দুই রাকাত করে প্রথম বৈঠক করা এবং এই বৈঠকে সালাম না ফেরানো।
এবার বিস্তারিত আলোচনা।

১) বিতির ছুটে গেলে কাযা করতে হবে
আহলে হাদীসদের মতে বিতির নামায এমনকি ফরয  নামায নামাযও যদি ছুটে যায় তাহলে কাযা করতে হবে না। বরং তাওবা করলেই চলবে।
قوله تعالي: إن الصلاة كانت علي المؤمنين كتابا موقوتا (سورة النساء-١٠٣)
আহনাফের মতে তাহাজ্জুদ নামাযে অভ্যস্ত ব্যক্তির জন্য তাহাজ্জুদের পর বিতির পড়া উত্তম। অন্যরা ইশার নামাযের সঙ্গেই বিতির পড়বে। কেউ যদি সময় মতো বিতির পড়তে না পারে তাহলে পরে কাযা করতে হবে। দলীল,
عن أبي سعيد، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من نام عن وتره، أو نسيه، فليصله إذا ذكره (أبو داود- ١/٢٠٣، سنن البيهقي- ٢/٤٨٠، المؤطأ لمالك- ٤٤، إبن ماجة- ١/٤٣٣)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
তাদের উত্থাপিত আয়াতে নামাযের সময় নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি যেমন উল্লেখ হয়েছে তেমনি পরোক্ষভাবে কাযা করার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। সহীহ হাদীসে ও আছারে সাহাবা তে বিষয়টির ব্যাখ্যা বিদ্যমান।
তাওবা ই যথেষ্ট এই কথাটি ঠিক নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, তা এমন তাওবা হতে হবে যার মধ্যে কাযা হয়ে যাওয়া নামায সমূহ আদায় করাটা অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং শুধু তাওবার মাধ্যমেই কাযা নামায মাফ হয়ে যাবে এই কথাটি ঠিক নয়। কারণ রাসূল সা. স্বয়ং খন্দকের যুদ্ধে কাযা হয়ে যাওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করেছেন। এবং হাদীসে কাযা নামায আদায় করার নির্দেশ এসেছে।  
২) বিতির সর্বনিম্ন তিন রাকাত
আহলে হাদীসদের মতে বিতিরের নামাজ এক রাকাত। দলীল,
قال رسول الله صلي الله عليه وسلم صلاة الليل مثني مثني والوتر ركعة قبل الصبح (إبن ماجة- ٨٢)
عن عائشة قالت كان رسول الله صلي الله عليه وسلم يسلم في كل ثنتين و يوتر بواحد (إبن ماجة- ٨٢)
আহনাফের মতে বিতিরের রাকাতের সংখ্যা তিনের অধিকও নয় আবার কম ও নয়। দলীল,
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن، أنه سأل عائشة رضي الله عنها، كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم في رمضان؟ فقالت: ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة، يصلي أربعا، فلا تسل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي أربعا، فلا تسل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي ثلاثا (رواه البخاري- ١/١٥٤، مسلم- ١/٢٥٤، الترمذي- ١/١٠٦، النسائي- ١/١٩٢، إعلاء السنن- ٦/٢٣، المؤطأ لمحمد- ١٤٥، شرح معاني الآثار- ١/١٩٦، المستدرك للحاكم- ١/٣٠٥)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
তাদের উল্লেখিত হাদীস আহনাফের বিপক্ষে নয় বরং পক্ষে। কারণ তারা হাদীসের মর্ম বুঝতে ভুল করেছে। আর হাদীসের মর্ম হলো, রাসূল সা. তাহাজ্জুদের নামায দুই দুই রাকাত করে আদায় করতেন। আর সুবহে সাদিক হওয়ার পূর্বে শেষ দুই রাকাতের সাথে এক রাকাত মিলিয়ে মোট তিন রাকাত বেজোড় করে আদায় করতেন। এটা হলো হাদীসের আসল মর্ম।
৩) তৃতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুর পূর্বে দোয়ায়ে কুনূত  পাঠ করা
আহলে হাদীসদের মতে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কুনূত  পাঠ করবে। দলীল,
عن أنس رض قال قنت رسول الله صلي الله عليه وسلم بعد الركوع (إبن ماجة- ٨٣)
আহনাফের মতে তৃতীয় রাকাতের কেরাতের পরে রুকুর পুর্বে কুনূত  পড়া হবে। দলীল, হযরত আসিম রহ. বলেন,
حدثنا عاصم، قال: سألت أنس بن مالك عن القنوت، فقال: قد كان القنوت قلت: قبل الركوع أو بعده؟ قال: قبله، قال: فإن فلانا أخبرني عنك أنك قلت بعد الركوع، فقال: كذب إنما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الركوع شهرا (رواه البخاري- ١/١٣٦)------------- إبن ماجة- ٨٣، مصنف إبن أبي شيبة- ٤/٥٢١، مشكل الآثار- ١١/٣٧٤، فتح الباري- ٢/٥٦٩
আহলে হাদীসের দলীলের জবাব
১) তারা আনাস রাযি. এর হাদীস দলীল হিসাবে এনেছে। অথচ আনাস রাযি. বলেছেন, যে বলবে আমি রুকুর পরে কুনূত  পড়ার কথা বলেছি সে মিথ্যা বলেছে।
২) অথবা রুকুর পর কুনূত  পড়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুনুতে নাযেলা। আর আহনাফের মতেও কুনুতে নাযেলা রুকুর পর পড়া হয়। সুতরাং কোন মতানৈক্য বাকী রইলো না।
৪) দোয়ায়ে কুনুতের আগে তাকবীর দিয়ে হাত উঠানো এবং পূনরায় হাত বাঁধা। এরপর কুনূত পাঠ করা
আহলে হাদীসদের মতে কুনুতের পূর্বে তাকবীর বলে হাত বেঁধে এরপর কুনূত পড়ার নিয়ম হাদীসে নেই। বরং দুই হাত মুনাজাতের মতো উঠিয়ে কুনূত পাঠ করবে। দলীল,
عن أنس بن مالك، أن نبي الله صلى الله عليه وسلم كان لا يرفع يديه في شيء من دعائه إلا عند الاستسقاء، فإنه كان يرفع يديه حتى يرى بياض إبطيه  (إبن ماجة، رقم الحديث - ١١٨٠)
আহনাফের মতে বিতিরের তৃতীয় রাকাতে কেরাতের পরে তাকবীর বলে হাত বেঁধে তারপর কুনূত পড়তে হবে। দলীল,
عن عبد الله، أنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر(مصنف إبن أبي شيبة- ٢/٣٠٧)
وعن علي، أنه كبر في القنوت حين فرغ من القراءة وحين ركع. وفي رواية: كان يفتتح القنوت بتكبيرة وكان عبد الله بن مسعود يكبر في الوتر إذا فرغ من قراءته حين يقنت، وإذا فرغ من القنوت وقال زهير، قلت لأبي إسحاق، أتكبر أنت في القنوت في الفجر؟ قال: نعم وعن البراء: أنه كان إذا فرغ من السورة كبر ثم قنت وعن إبراهيم، يقوم في القنوت في الوتر، إذا فرغ من القراءة، ثم قنت ثم كبر وركع وعن سفيان، كانوا يستحبون إذا فرغ من القراءة في الركعة الثالثة من الوتر أن يكبر، ثم يقنت (قيام الليل- ص٢٢٩،٢٣٠)
وأما التكبيرة في القنوت في الوتر , فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة , وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها (شرح معاني الآثار- ١/٤١٦)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনূত পাঠের সময় হাত উঠিয়ে তাকবীর বলার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। আর লা মাযহাবীরা কুনুতের সময় হাত না উঠানোর ব্যাপারে একটা হাদীসও দেখাতে পারবে না। তারা যে হাদীসটি দলীল হিসাবে উল্লেখ করেছেন তাতে নামাযের বাহিরে দোয়ার সময় যে পরিমান হাত রাসূল সা. উঠাতেন তার চেয়ে ইস্তিসকার নামাযের সময় হাত বেশি উঠাতেন। এই বিষয়টি হাদীসে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এই হাদীসটি বিতিরের নামাযে কুনূত  পাঠের সময় হাত উঠিয়ে তাকবীর বলার বিষয়টিকে নফি করে না। কারণ এখানে তাকবীরের জন্য হাত তোলাটা দোয়ার জন্য হাত তোলার মতো নয়। তাই লা মাযহাবী ভাইদের কিয়াস অসার বলে প্রমাণিত হলো।
তারা বলে থাকে কুনুতের সময় মুনাজাতের মতো হাত তুলে রাখবে। এটি তাদের বানানো একটি বিষয়। হাদীসে যার কোন অস্তিত্ব নেই। তারা বিতিরের দোয়ায়ে কুনূত কে ইস্তিসকার দোয়া ও সাধারন দোয়ার সাথে তুলনা করে হাত তুলে রাখার কথা বলে থাকে। এটিও তাদের একটি অবান্তর যুক্তি।   
৫) বিতির নামাযে দুই রাকাত পড়ে প্রথম বৈঠক করা এবং এ বৈঠকে সালাম না ফেরানো
আহলে হাদীসদের মতে বিতির তিন রাকাত দুই সালামে আদায় করা হবে। অর্থাৎ রাসূল সা. দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাতেন পরে দাঁড়িয়ে এক রাকাত আদায় করতেন। এবং দ্বিতীয় রাকাতে মাগরিব নামাযের মতো বৈঠক করতেন না। দলীল,
عن عائشة قالت كان رسول الله صلي الله عليه وسلم يسلم في كل ثنتين و يوتر بواحد (إبن ماجة- ٨٢)
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূল সা. (তাহাজ্জুদের) প্রতি দু রাকাত পরপর সালাম ফিরাতেন। এবং এক রাকাত বিতির আদায় করতেন। (ইবনে মাজাহ ১/৪২৯-৪৩৪)
আহনাফের মতে বিতিরের দুই রাকাতের পর যথারীতি প্রথম বৈঠক হবে এবং তাশাহহুদের পর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতে হবে। তৃতীয় রাকাত সমাপ্ত হওয়ার পর সালাম ফেরাতে হবে। দলীল,
عن عائشة، قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهن وهذا وتر أمير المؤمنين عمر بن الخطاب رضي الله عنه وعنه أخذه أهل المدينة  (المستدرك علي الصحيحين للحاكم- ١/٣٠٤)
عن سعد بن هشام، أن عائشة حدثته، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان لا يسلم في ركعتي الوتر( النسائي- ١/١٩١)------------ فتح الباري-٢/٤٨١، جامع المسانيد- ١/٤٠٢، زاد المعاد- ١/٣١٩، المعجم الأوسط، رقم الحديث-٦٦٦١، المؤطأ لمالك، رقم الحديث- ٢٦٦)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
রাসূল সা. হযরত ওমর এবং তাবেয়ীগনের মধ্য থেকে অনেকের আমল হলো, বিতির এক সালামের মাধ্যমে তিন রাকাত আদায় করা । এবং অনেক হাদীসে বিতির নামাযকে মাগরিবের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং মাগরিবের নামাযে যেমনিভাবে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদ শেষ করে সালাম ফিরানো ব্যতীতই তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে যায় এমনিভাবে বিতির নামাযেও দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদ পড়ে উঠে যাবে। এবং তৃতীয় রাকাতের শেষে সালাম ফিরাবে।
আর লা মাযহাবী ভাইয়েরা এখানেও হাদীসের মর্ম বুঝতে ভুল করেছেন। তা হলো রাসূল সা. ১১ অথবা ১৩ রাকাত নামায আদায় করতেন। এর মধ্যে আট রাকাত অথবা ১০ রাকাত হলো তাহাজ্জুদ। আর বাকী তিন রাকাত হলো বিতির। আর রাসূল সা. প্রত্যেক দুই রাকাতের পর সালাম ফিরাতেন। কিন্তু শেষ দুই রাকাতে গিয়ে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরানো ব্যতীত উঠে যেতেন। এবং সাথে এক রাকাত মিলিয়ে মোট তিন রাকাত বিতির আদায় করতেন। আর লা মাযহাবীরা যে ভুল বুঝে থাকেন তা হলো যে, রাসূল সা. সর্বশেষ দুই রাকাতে সালাম ফিরাতেন এবং দাঁড়িয়ে এক রাকাত বিতির আদায় করে নিতেন। দুই সালামে মোট তিন রাকাত পড়ে নিতেন। তাদের এই ব্যাখ্যা ভিত্তিহীন ও অগ্রহনযোগ্য।
২০-তারাবীহ বিশ রাকাত পড়া সুন্নাত
আহলে হাদীসদের মতে তারাবী নামায আট রাকাত। প্রথমে তাদের অনেকেই বিশ রাকাত তারাবীহ পড়ে গেছেন। সর্বপ্রথম ১২৮৪ হিজরীতে ভারতের আকবরাবাদ থেকে এদের একজন আট রাকাত তারাবীহের ফতোয়া দেন। তীব্র প্রতিবাদের কারণে সেই ফতোয়া টিকতে পারে নি। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী নামে এদের অপর একজন ফতোয়া দেন যে, আট রাকাত তারাবীহ পড়া সুন্নাত। বিশ রাকাত পড়া বিদআত। এরপর হাফেজ আব্দুল্লাহ ও মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপূরী সহ এদের আরো কিছু আলেম জোড়ালোভাবে ঐ ফতোয়া প্রচার করতে থাকেন। এভাবে আট রাকাতের প্রচলন তাদের মধ্যে চালু হয়। দলীল,
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن، أنه سأل عائشة رضي الله عنها، كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم في رمضان؟ فقالت: ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة، يصلي أربعا، فلا تسل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي أربعا، فلا تسل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي ثلاثا (رواه البخاري- ١/١٥٤)
আহনাফের মতে তারাবীহ নামায বিশ রাকাত। আর এই বিশ রাকাত পড়ার নিয়ম রাসূল সা. এর যুগে ও খুলাফায়ে রাশেদীন ও তাবেয়ীদের যুগে চালু ছিলো। এবং এই ব্যাপারে ইজমায়ে সাহাবা রয়েছে। এবং চার ইমাম বিশ রাকাতের ব্যাপারে একমত। চৌদ্দশ বছর যাবৎ বিশ রাকাতের আমল মক্কা ও মদীনায় চালু রয়েছে। দলীল,
عن ابن عباس، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلي في رمضان عشرين ركعة والوتر(مصنف إبن أبي شيبة- ٢/٢٨٦)
عن ابن عباس، أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يصلي في رمضان عشرين ركعة سوى الوتر (المعجم الأوسط، رقم الحديث- ٧٩٨)
عن يزيد بن رومان؛ أنه قال: كان الناس يقومون في زمان عمر بن الخطاب، في رمضان، بثلاث وعشرين ركعة (المؤطأ لمالك، رقم الحديث- ٣٨٠)--------------- فتح الباري لإبن حجر، رقم الحديث- ٢٠١٢، الأذكار للنبوي-ص٨٣، نصب الراية-٢/١٥٤)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
তাদের উত্থাপিত হাদীসে তাহাজ্জুদ নামাযের কথা বলা হয়েছে। তারাবীহের কথা বলা হয় নি। কেননা উক্ত হাদীসে এগারো রাকাত নামায রাসূল সা. এর রমযান এবং রমযানের বাহিরের আমল হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, উক্ত হাদীসে তারাবিহের কথা বলা হয় নি। বরং তাহাজ্জুদের কথা বলা হয়েছে। এবং মুহাদ্দিসীনে কেরাম যারা হাদীসের কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন তাদের কেউ এই হাদীসকে তারাবীহের অধ্যায়ে উল্লেখ করেন নি। বরং কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ নামাযের অধ্যায়ে উক্ত হাদীসকে উল্লেখ করেছেন।
যদি আলোচ্য হাদীসটি তারাবীহ সংক্রান্ত মেনেও নেয়া হয় তাহলেও এই কথা প্রমাণ করা যাবে না যে রাসূল সা. আট রাকাতই পড়তেন, বেশি পড়তেন না। কেননা হযরত আয়েশা রাযি. হতে অপর একটি হাদীস বর্নিত হয়েছে যে, রাসূল সা. ১৩ রাকাত পড়তেন। (মিশকাত ১/১১১) উভয় হাদীসই সহীহ। সুতরাং রাসূল সা. কখনো ১১ রাকাত পড়তেন আবার কখনো ১৩ রাকাত পড়তেন। এখন লা মাযহাবী ভাইদের নিকট প্রশ্ন হলো আপনারা ১৩ রাকাত কোনদিন পড়েন না কেন?
যদি উক্ত হাদীস তাহাজ্জুদের ব্যাপারে মেনেও নেয়া হয় তাহলেও লা মাযহাবী ভাইদের নিকট প্রশ্ন থেকে যায় যে, তাদের উল্লেখিত হাদীসে রাসূল সা. তো চার রাকাত পর পর সালাম ফিরিয়েছেন আপনারা কেন দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরান?
২১- জানাযার নামায পড়ার পদ্ধতি
আহলে হাদীসদের মতে সানা পড়ার পর সূরা ফাতেহা পড়া ফরয। দলীল,
عن عبادة بن الصامت: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب (رواه البخاري-١/١٠٤)
عن ابن عباس، أن النبي صلى الله عليه وسلم قرأ على الجنازة بفاتحة الكتاب (رواه الترمذي- ١/١٩٨)
আহনাফের মতে জানাযার নামাযে সূরা ফাতেহা পড়া সুন্নাত নয়। বরং প্রথম তাকবীর বলে সানা পড়া, দ্বিতীয় তাকবীর বলে দুরুদ শরীফ পড়া, তৃতীয় তাকবীর বলে দোয়া পড়া এবং চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরানো সুন্নাত। হ্যাঁ, সানার পরিবর্তে দোয়া হিসাবে ফাতেহা পড়তে পারবে। ক্বেরাত হিসাবে নয়।
عن أبي هريرة، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إذا صليتم على الميت، فأخلصوا له الدعاء  (رواه إبن ماجة، رقم الحديث-١٤٩٧، أبو داود- ١/٤٥٦، السنن الكبري للبيهقي، رقم الحديث- ٦٩٦٤، صحيح إبن حبان، رقم الحديث- ٣٠٧٦)
عن نافع، أن ابن عمر كان لا يقرأ في الصلاة على الميت (مصنف إبن أبي شيبة، رقم الحديث-١١٤٠٤)-------- رد المحتار- ٣/١١١
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
তাদের উত্থাপিত প্রথম হাদীস لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب এই হাদীসটি জানাযার নামাযকে অন্তর্ভূক্ত করে না। কারণ মূলত জানাযা কোন নামায নয়। বরং তা মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার।
ইবনে আব্বাস রাযি. এর হাদীসের জবাব
১- ইবনে আব্বাস রাযি. এর হাদীস ইবনে ওমর ও ইবনে আওফ রাযি. এর হাদীসের বিপরীত।
২- হাদীসে ফাতেহা পাঠের কথা বলা হয়েছে তা মূলত সানা হিসাবে পড়া হয়েছে। তিলাওয়াত হিসাবে নয়। আর তা আমাদের নিকটও মাকরুহ নয়।
২২-ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর বলা সুন্নাত
আহলে হাদীসদের মতে ঈদের নামাযে বারো তাকবীর বলা সুন্নাত। দলীল,
রাসূল সা. এর মুয়াজ্জিন সাদ রাযি. থেকে বর্নিত যে, রাসূল সা. দুই ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতের শুরুতে সাত তাকবীর ও শেষ রাকাতে ক্বেরাতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর বলবে। (ইবনে মাজাহ ১/৪৬৯, আবু দাউদ ২/১৪৬)
আহনাফের মতে রাসূল সা. থেকে একাধিক সহীহ হাদীস এবং বহু সাহাবী ও তাবেয়ীদের ফতোয়া ও আমল দ্বারা এই কথা প্রমাণিত হয় যে, ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর বলা সুন্নাত। যেমন প্রথম রাকাতে তাহরীমার পর সানা পড়ে ক্বেরাতের পূর্বে তিন তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পরে রুকুর আগে তিন তাকবীর। অতিরিক্ত এই ৬ তাকবীর বলা সুন্নাত।
عن ابن مسعود، أنه قال في التكبير في العيدين: " تسع تكبيرات في الركعة الأولى: خمسا قبل القراءة، وفي الركعة الثانية يبدأ بالقراءة ثم يكبر أربعا مع تكبيرة الركوع " وقد روي عن غير واحد من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم نحو هذا، وهو قول أهل الكوفة، وبه يقول سفيان الثوري (رواه الترمذي- ١/٧٠)---------- شرح معاني الآثار- ١/٣٢٠، البخاري-١/١٣١، مسند أحمد- ٤/٤١٦)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
বারো তাকবীরের কথাও যেহেতু হাদীসে উল্লেখ আছে তাই এটিও একটি জায়েজ পন্থা। সুতরাং কোথাও যদি এই পদ্ধতিতে নামায হয় তাহলে সেখানে আপত্তি করার প্রয়োজন নেই। ঝগড়ার তো প্রশ্নই আসে না।
এই মাসআলার মতভিন্নতা জায়েজ নাজায়েজ নিয়ে নয়। বরং উত্তম-অনুত্তম নিয়ে তাই ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন, তাকরীরের সংখ্যার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। সুতরাং যে যেটা ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারবে তবে আমাদের মতে ইবনে মাসঊদ রাযি. থেকে বর্নিত পদ্ধতিটি সবচেয়ে উত্তম। তা হলো, তিনি প্রত্যেক ঈদে নয় তাকবীর বলতেন। প্রথম রাকাতে পাঁচ তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকাতে চার তাকবীর মোট ৯ তাকবীর। (মুয়াত্তা মুহাম্মদ ১৪১ পৃষ্ঠা)
২৩- জুমআর আগের ও পরের সুন্নাত
আহলে হাদীসদের মতে জুমআর আগে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা বলতে হাদীসে এর কোন প্রমাণ নেই। দলীল,
عن سالم، عن أبيه، أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يصلي بعد الجمعة ركعتين (رواه مسلم، رقم الحديث-٨٨٢)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. এর সঙ্গে জোহরের আগে দুই রাকাত, জোহরের পরে দুই রাকাত, জুমআর পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত ও ইশার পরে দুই রাকাত সুন্নাত আদায় করেছি। (বুখারী ২/৩১৭,৩১৯, মুসলিম ৩/৫৩)
আহনাফের মতে জুমআর পূর্বে চার রাকাত এবং জুমআর পরে চার রাকাত মোট আট রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা। দলীল,
عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا صلى أحدكم الجمعة فليصل بعدها أربعا (رواه مسلم، رقم الحديث-٨٨١، النسائي، رقم الحديث- ١٤٢٦، مسند أحمد، رقم الحديث-١٠٤٨٦)
عن قتادة، أن ابن مسعود كان يصلي قبل الجمعة أربع ركعات، وبعدها أربع ركعات "، قال أبو إسحاق: وكان علي يصلي بعد الجمعة ست ركعات (مصنف عبد الرزاق، رقم الحديث- ٥٥٢٤)--------- مصنف إبن أبي شيبة، رقم الحديث-٥٣٦٣)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
আহলে হাদীসদের মতে জুমআর পূর্বে দুই রাকাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। আহনাফের মতে উক্ত দুই রাকাত হলো তাহিয়্যাতুল মাসজিদ। আর বাকী চার রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা সহীহ হাদীস ও আছারে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত। আর জুমআর পরে চার রাকাতের পরিবর্তে তারা দুই রাকাত পড়ে থাকে। এটা তাদের হাদীস অনুধাবনের কমতির কারণে। কারণ রাসূল সা. জুমআর পরে কখনো দুই রাকাত মসজিদে আদায় করতেন আর বাকী দুই রাকাত ঘরে আদায় করতেন। আবার কখনো চার রাকাতই মসজিদে আদায় করতেন। লা মাযহাবী ভাইয়েরা রাসূল সা. এর মসজিদে দুই রাকাত আদায় করার বিষয়টি লক্ষ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ঘরে গিয়ে যে দুই রাকাত আদায় করেছেন তা লক্ষ করেন নি। সুতরাং লা মাযহাবী ভাইদের উচিত পূর্নাঙ্গভাবে রাসূল সা. এর অনুসরণ করা।  

২৪-জুমআর খুতবা চলাকালে খুতবা শ্রবণ ব্যতীত নামায সহ যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা
আহলে হাদীসদের মতে জুমআর খুতবা চলাকালে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে তাঁর জন্য উক্ত অবস্থায় দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়া আবশ্যক। তারা এর দলীল হিসাবে সুলাইক গাতফানী রাযি. এর হাদীসকে উল্লেখ করে থাকেন। দলীল,
سمع جابر بن عبد الله، قال: دخل سليك الغطفاني المسجد والنبي صلى الله عليه وسلم يخطب، فقال: أصليت قال: لا، قال فصل ركعتين (رواه إبن ماجة- ص٧٨)
আহনাফের মতে জুমআর খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। সুতরাং খুতবার সময় কথা-বার্তা, নামায পড়া এবং খুতবা শ্রবণে অমনযোগী করে এমন সকল কাজ করা নাজায়েজ। তাই জুমআর খুতবা চলাকালীন অবস্থায় কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে তার কর্তব্য হলো, সে যেন কোন ধরনের নামায ও অন্য কাজে লিপ্ত না হয়ে চুপ করে বসে খুতবা শ্রবণ করে। দলীল,
وإذا خرج الإمام يوم الجمعة ترك الناس الصلاة والكلام حتى يفرغ من خطبته (عناية مع فتح القدير-٢/٦٥)
كان نبيشة الهذلي، يحدث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم: أن المسلم إذا اغتسل يوم الجمعة، ثم أقبل إلى المسجد، لا يؤذي أحدا، فإن لم يجد الإمام خرج، صلى ما بدا له، وإن وجد الإمام قد خرج، جلس فاستمع وأنصت، حتى يقضي الإمام جمعته وكلامه، إن لم يغفر له في جمعته تلك ذنوبه كلها، أن تكون كفارة للجمعة التي تليها (مسند أحمد، رقم الحديث-٢٠٧٢١)-------البخاري- ١/١٢١، مسلم- ١/٢٨٣، أبو داود- ١/٥٠، النسائي- ١/٢٠٥، الترمذي- ١/٦٦، الشامي- ٣/٣٤،٣٥، الفتاوي الهندية- ١/١٤٧، مجمع الزواهد- ٢/١٧٧)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
১) খুতবার সময় নামায পড়াটা ঐ সাহাবীর জন্য খাছ ছিলো। যাতে সকল সাহাবাগন তার অস্বচ্ছলতা দেখে তাকে দান করতে উৎসাহিত হন।
২) অথবা খুতবার সময় দুই রাকাত নামায পড়ার ঘটনাটি খুতবার সময় নামায নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে ঘটেছিলো।
২৫- মসজিদে সানী জামাত করা
আহলে হাদীসদের মতে মসজিদে নির্ধারিত ইমাম মুয়াজ্জিন কতৃক জামাত হওয়ার পরও প্রয়োজনবোধে একাধিক বার জামাত করা যাবে। এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। দলীল,
১) একদা হযরত আনাস রাযি. এমন এক মসজিদে গমন করলেন যেখানে জামাত হয়ে গিয়েছিলো। তখন তিনি সেখানে আযান ও ইকামত দিয়ে জামাতের সাথে নামায পড়লেন। (ইলাউস সুনান ৪/২৪৮)
২) একদা এক ব্যক্তি এমন সময় মসজিদে এসে উপস্থিত হলেন যখন রাসূল সা. নামায পড়ে ফেলেছিলেন। তখন রাসূল সা. উক্ত ব্যক্তিকে দেখে সাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার নামাযে সঙ্গ দিবে? তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে নামায পড়লেন।
আহনাফের মতে জামাত হয়ে যাওয়ার পর কতক মসজিদ এমন রয়েছে যাতে একাধিকবার জামাত করা জায়েজ। আর কতক মসজিদ এমন রয়েছে যাতে একাধিক জামাত করা মাকরুহ।
যে সকল মসজিদে একাধিক জামাত করা জায়েজ সেগুলো হলো,
১) রাস্তার পাশের মসজিদ যেখানে নির্দিষ্ট কোন মুসল্লী নেই।
২) এমন মসজিদ যাতে নির্দিষ্ট কোন ইমাম মুয়াজ্জিন নেই।
৩) মহল্লার মসজিদ যেখানে অন্য মহল্লার লোকেরা জামাত করে চলে গিয়েছে।
৪) মহল্লার মসজিদে মহল্লার লোকেরা আযান দেয়া ছাড়া নামায পড়েছে।
উক্ত চার সূরতে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা জায়েজ বরং উত্তম।
যে সকল মসজিদে একাধিক জামাত করা মাকরূহ তা হলো
১) এমন মসজিদ যেখানে নির্ধারিত ইমাম মুয়াজ্জিন রয়েছে এবং মহল্লাবাসী একবার আযান দিয়ে জামাত করেছে। সেই মসজিদে দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে জামাত করা মাকরূহ।
২) শুধু আযান দেয় নি, আর বাকী নিয়ম ঠিক রেখে আগের মতই জামাত করা। এটাও মাকরূহ।
এই দুই সূরতে দ্বিতীয় জামাত করা মাকরূহ। (ফাতাওয়ায়ে শামী ২/২৮৮,২৮৯)

আহনাফের দলীল,
হযরত আব্দুর রহমান বিন মুজাফফর রহ. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা আমি সালিম বিন আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযি. এর সঙ্গে এক জামে মসজিদে গিয়ে দেখি সেখানে জামাত হয়ে গিয়েছে। লোকেরা হযরত সালিমকে বললেন, আপনি কি দ্বিতীয়বার জামাত করবেন না? সালিম রাযি. বললেন, একই মসজিদে একাধিক জামাত করা বৈধ নয়। (ইলাউস সুনান ৪/২৪৮, মুদাওয়ানাতুল কুবরা ১/৯৯)
হযরত আবু বকর রাযি. থেকে বর্নিত রাসূল সা. একদা মদীনার কোন এলাকা থেকে এসে জামাত পাননি। তখন রাসূল সা. নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরিবারের লোকদেরকে নিয়ে গৃহে জামাত করেন। (মাজমাউয যাওয়াহিদ ১/১৬০, ইলাউস সুনান ৪/২৫২)


আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব
তাদের উল্লেখকৃত প্রথম হাদীস হলো, হযরত আনাস রাযি. নতুন করে আযান ও ইকামত দিয়ে জামাত করেছেন। এর থেকে বুঝে আসে যে, নিশ্চয় উক্ত মসজিদটি পথের ধারের মসজিদ হবে। বা এমন হবে যে, উক্ত মসজিদের পাশের লোক ব্যতীত অন্য কেউ আযান ব্যতীত জামাত করে গিয়েছে। তাই তিনি নতুন করে আযান ইকামত দিয়ে জামাত করেছেন। অন্যথায় যারা একাধিক জামাতের প্রবক্তা তারাও নতুন করে আযান ইকামত দিয়ে দ্বিতীয় জামাত করার পক্ষপাতি নয়।
দ্বিতীয় হাদীসের জবাব হলো, উক্ত হাদীস দ্বারা তাদের দাবীর স্বপক্ষে দলীল দেয়া ঠিক না। কারণ তাতে মুক্তাদী ছিলেন নফল নামায পড়নেওয়ালা। যিনি রাসূল সা. এর সাথে পূর্বে ফরয আদায় করে ফেলেছিলেন। আর এরূপভাবে জামাত করা তো হানাফীরাও জায়েজ বলেন। কিন্তু তাদের সাথে আহনাফের দ্বন্দ হলো, ভিন্নভাবে এমন ব্যক্তিদেরকে নিয়ে দ্বিতীয়বার জামাত করা যারা এখনো ফরয পড়েন নি। এভাবে জায়েজ হওয়ার পক্ষে দলীল হিসাবে তারা কোন হাদীস দেখাতে পারবে না। বরং এর বিপরীত হানাফীদের অসংখ্য হাদীস রয়েছে।
একাধিক জামাতের ক্ষতিসমূহ
১) রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরামের বিরোধিতা করা। কেননা তারা একাধিক জামাত করতেন না।
২) প্রথম জামাতে শরীক না হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠা। ফলে তা মানুষকে দিন দিন গাফলতির দিকে নিয়ে যাবে।
৩) একাধিক জামাতের দ্বারা মানুষের মাঝে বাহ্যিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়।



উপসংহার
আহনাফ ও আহলে হাদীসের মধ্যে যে সকল মাসআলা নিয়ে দ্বন্দ রয়েছে তা ঈমান ও আক্বীদাগত মাসআলা  নিয়ে নয়। বরং তা অনেকটাই উত্তম-অনুত্তম হওয়া নিয়ে, গুটি কয়েকটি রয়েছে ফরয ও ওয়াজিব হওয়া নিয়ে।
ইসলামের মূল মেজাজ সাধারণ বিষয় নিয়ে পরস্পর দ্বন্দ করা নয়। কারণ আমাদের আল্লাহ, রাসূল ও গন্তব্য এক।
আর ইসলামের মূল মেজাজ হচ্ছে সকল মানুষ যেন হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সরল ও সঠিক পথে এসে যায়। এবং আল্লাহ ভোলা বান্দাগুলো যেন আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যায়। তাই এখন সকলের জন্য আবশ্যক হলো, সরল ও সঠিক পথ ও কোরআন ও হাদীসের সহীহ ব্যাখ্যা কোনটি তা চিহ্নিত করা। যাতে সর্ব সাধারন সতর্ক হতে ও সঠিক বিষয় বুঝতে পারে যে, আকাবীর ও আসলাফ কোরআন ও হাদীসের যেই ব্যাখ্যা করেন তা সঠিক নাকি চৌদ্দশত বছর পরে নব আবির্ভূত আহলে হাদীসদের মস্তিষ্ক প্রসূত ব্যাখ্যা সঠিক? এবং যাতে মানুষ তাদের অপব্যাখ্যার জালে আটকে না যায়।

আহলে হাদীস ভাইদের নিকট আকুল আবেদন যে, হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ ভুলে গিয়ে আসুন আমরা সকলে সরল ও সঠিক পথে চলি যাতে পরকালে সকলে একসাথে জান্নাতে থাকতে পারি। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন

No comments:

Post a Comment